Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Tuesday 3rd December 2024
সম্পাদকীয়
ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 02-Sep-2019

ডেঙ্গু নিয়ে গবেষণা



উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলা মুলুকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও বিস্তার বরাবরই ছিল, আছে ও থাকবে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে রকমারি কীটপতঙ্গ-মশা-মাছির উৎপাত-উপদ্রব এবং বাহক হিসেবে রোগবালাই মহামারীর বিস্তার অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ নিয়ে ভীতি ও আতঙ্ক ছিল অতীতেও। রবীন্দ্রনাথের জীবন স্মৃতিতে পাওয়া যায়, ‘একবার কলকাতায় ডেঙ্গু জ্বরের তাড়ায় আমাদের বৃহৎ পরিবারের কিয়দংশ পেনেটিতে (পানিহাটি) ছাতুবাবুদের বাড়িতে আশ্রয় লইল। আমি তাহার মধ্যে ছিলাম।’ উল্লেখ্য, সালটি ১৮৭২। রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ১২। স্কুলে বাংলা শিক্ষা শেষ করে ভর্তি হয়েছেন বেঙ্গল স্কুলে। এ সময় বিভীষিকা তথা মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিল ডেঙ্গুজ্বর। ১৮৭২-৭৩ সালের বেঙ্গল এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তখন ডেঙ্গু নিয়ে রীতিমতো নোটিস জারি করা হয়েছিল। ওই সংবাদে ৫০০ জনের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ আছে, বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে।

আর ২০১৯ সালের আগস্ট মাসেই কেবল বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার ডেঙ্গু রোগীর ভর্তির খবর আছে বাংলাদেশে, যা গত ১৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত মোট রোগীর চেয়েও এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। সর্বোপরি এবার এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে ৬৪টি জেলার সর্বত্র। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ছাতারপাড়া গ্রামের দাঁড়পাড়াতেই শনাক্ত হয়েছে ৪১ ডেঙ্গু রোগী। এর কারণ অনুসন্ধানে সেখানে গেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রতিনিধি দল। এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাও অনেক বেশি, ১৯০ জন। সুতরাং ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন, বিস্তার প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে নিয়মিত গবেষণা জরুরী হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে যে, এই বাংলাতেই এনোফিলিস মশার ওপর গবেষণা করে ম্যালেরিয়ার ওষুধ আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল পান স্যার রোনাল্ড রস। আর বেলেমাছির মাধ্যমে সংক্রমিত কালাজ্বরের ওষুধ আবিষ্কার করেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।

প্রতিবছরই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ঘটে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে। তবে এবার সংক্রমণ অনেক বেশি। এর দায় অবশ্য প্রতিবারের মতো সিটি কর্পোরেশনের ওপর চাপানো হচ্ছে। তবে ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মশা মারা যেমন মেয়রদ্বয়ের কাজ নয় অবশ্যই; কিন্তু জলাবদ্ধতায় আকীর্ণ মহানগরীর নালা-নর্দমা-পয়োবর্জ্য-আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং মশা-মাছির ওষুধ ছিটানো দুই সিটির অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে। এক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতিও দেখা যায়। সর্বশেষ দুই মেয়রের ভাষ্যে জানা যায়, প্রচলিত ওষুধে নাকি মশা মরছে না। নতুন ওষুধ আনতে হবে বিদেশ থেকে, যাতে সময় লাগতে পারে। এ নিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দ্বৈরথও দৃশ্যমান, যা কাম্য নয় কোনমতেই।

ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ ও টিকা অদ্যাবধি না পাওয়া গেলেও সময়োপযোগী সুচিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও বাড়ানো অত্যাবশ্যক। নিয়মিত গবেষণাও জরুরী। কেননা এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া প্রায়ই হামলা করে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাড়তি উপদ্রব নিত্যনতুন রোগব্যাধি, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এইডস, সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, এ্যানথ্রাক্স, ইবোলা ভাইরাস, জিকা ভাইরাস ইত্যাদি। পুরনো ওষুধ, এ্যান্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক বাতিল হয়ে যাচ্ছে। সে অবস্থায় নতুন রোগব্যাধির বিরুদ্ধে নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কার এখন সময়ের দাবি। এসব ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য সরকারকে বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে আলাদাভাবে। প্রণয়ন করতে হবে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ-প্রতিকারের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলপত্র। তদুপরি বছরব্যাপী নিয়মিত চালাতে হবে মশক নিধন কার্যক্রম।





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে





তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ