Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Tuesday 17th September 2024
রাজনীতি
‘শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন’ তারেক রহমান
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 01-Sep-2024

‘শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন’ তারেক রহমান



সাননিউজবিডি ডটকম ডেস্ক:॥রাজনীতি॥ শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) লন্ডন থেকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত/রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশে গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি দেশ এবং জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখেছে। এ কারণেই, শত প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়েও দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যাদের নেতৃত্বে, যাদের আত্মত্যাগে/যাদের শ্রম ঘাম মেধায় বিএনপি আজ সারাদেশের জনগণের কাছে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভলঘ্নে তাদের সবার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, দেশ বর্তমানে ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আর অসংখ্য ছাত্র জনতার নিদারুন যন্ত্রণাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। তবে গণ অভুত্থানের সাফল্য এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি সর্তক থাকলে বাংলাদেশকে আর বিপথে নেয়া যাবেনা। আর পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ষড়যন্ত্র কিংবা অপপ্রচার চালিয়ে গত ১৫ বছরের অনাচার অবিচার জনগণকে ভুলিয়ে দেয়া যাবেনা। রাষ্ট্রীয় স্থাপনা গণভবন ছিল/দেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী স্মারক। গণভবন/বর্তমানে স্বৈরাচারী হাসিনার দুর্নীতি দুঃশাসন,অনাচার, অপকর্মের প্রতীক। ইতোমধ্যেই বিভিন্নমহল থেকে এই গণভবনকে গুম খুন অপহরণ এবং গণহত্যার মিউজিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে। ২০০৯ সালের পিলখানায় সেনাহত্যা থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বর হত্যাকাণ্ড, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৮, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সময় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ২০২৪ সালে গণ অভুত্থানে শহীদ এবং গুম হওয়া মানুষদের স্মৃতিগুলো এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত থাকবে। অবৈধ ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশে আর কোনো শাসক যাতে স্বৈরাচারী হাসিনার মতো বর্বরোচিত পথ অনুসরণ না করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই মিউজিয়াম সেই বার্তাই বহন করবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে এমন সময় হঠাৎ করেই চাপিয়ে দেয়া বন্যা পরিস্থিতি দেশের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চল গ্রাস করে নিয়েছে। বন্যার করাল গ্রাসে প্রায় এককোটি মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছেন। বিনষ্ট হয়েছে সম্পদ। এমন পরিস্থিতিতে, সাধ্যমতো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সকল কর্মসূচি বাতিল করেছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো এলাকায়/ বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন/ এই মুহূর্তে তাদেরকে বন্যা বিধ্বস্ত ঘরে ফেরানো কিংবা তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বন্যাকালীন পরিস্থিতি থেকেও কিছুটা জটিল। সুতরাং, আপনারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখুন। সমন্বিতভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ান। বিশেষ করে যেসব পরিবারে নারী শিশু বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা রয়েছেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ান। সফলজনকভাবে বন্যা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একজন নাগরিক হিসেবে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নেও সক্রিয় ভূমিকা রাখুন।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র রাজনীতি শিক্ষা সংস্কৃতি অর্থনীতি জন প্রশাসন বিচারবিভাগ সকল ক্ষেত্রে দেশকে এক নৈরাজ্যকর অবস্থায় রেখে/স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়েছে। দেশকে একটি ঋণ নির্ভর আমদানি নির্ভর পর নির্ভর রেখে স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়েছে। শুধুমাত্র একজন হাসিনাই পালিয়ে যায়নি। তার বিনাভোটের মন্ত্রিসভা, বিনা ভোটের সকল এমপি এমনকি তাদের নিয়োগ দেয়া বায়তুল মোকাররমের খতিব পর্যন্ত পালিয়েছে। দেশের এমন নজিরবিহীন ভয়ানক পরিস্থিতি অতিক্রম করে জনগণ এখন সম্মান এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চায়। তাই দেশকে জনতার কাঙ্খিত বাংলাদেশে রূপান্তর করতে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের বিকল্প নেই। তবে রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান, দীর্ঘমেয়াদি এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। টেকসই এবং কার্যকর উপায়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ জরুরি। গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলোতে জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। কারণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার এবং জনগণের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন হচ্ছে জনপ্রনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ।

তিনি বলেন, জনগণের লুন্ঠিত ভোটের অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে/একটি জনপ্রনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী,জন প্রশাসন, দুদকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কিংবা পুনর্গঠন জরুরি। সেই লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। সুতরাং, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জনপ্রনিধিত্বশীল রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনের লক্ষ্যে দেশকে নির্বাচনী রোডম্যাপে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবরকমের সহায়তা করতে প্রস্তুত।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমি মনে করি আমাদের দল বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র সংস্কারকে কার্যকর করতে হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সে লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে/রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি দলীয় রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা পরপর দুই টার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করা ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন এমনকি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয়ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের দল বিএনপি মনে করে জনগণের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গঠনের জন্য রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারের বিকল্প নেই। দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমগুলো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে হলে সেটি বেশি কার্যকর বলেও জনগণ বিশ্বাস করে। গণতান্ত্রিক বিশ্বেও এটি স্বীকৃত।

তিনি বলেন, আমাদের আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। পলাতক স্বৈরাচার জাতীয় জীবনের ১৫টি বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই দুঃস্বপ্নকে দূরে ঠেলে দিয়ে দেশের জনগণের সামনে একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গড়াই বিএনপির আগামীদিনের লক্ষ্য। বিএনপি বিশ্বাস করে তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে/ কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বর্তমান প্রজন্ম প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। সমৃদ্ধি-সম্মান-এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত দেখতে চায়। এ জন্য রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং কর্মক্ষম জনশক্তির সামনে সম্ভাবনার সকল দরজা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধ এবং কর্মমুখী শিক্ষানীতির পাশাপাশি দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্হান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরী করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবার আমি সারাদেশে আমার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো কয়েকটি কথা বলতে চাই। আপনারাই বিএনপির প্রাণ। শত নির্যাতন নিপীড়ণ হামলা মামলা হয়রানি শিকার হয়েও আপনারা জাতীয়তাবাদের আদর্শ বিচ্যুত হননি। আমি জানি, অতীতে বছরের পর বছর ধরে আপনাদের অনেকেই মাফিয়া সরকার এবং তাদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। তবে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপনাদের প্রতি আমার একটি অনুরোধ অতীতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে আপনারা কেউ প্রতিশোধ পরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। বরং অন্যায় অবিচারের শিকার হলে আইনগত পদক্ষেপ নিন। তবে খেয়াল রাখবেন কেউ যেন হয়রানিমূলক হামলা-মামলার শিকার না হন।

আপনাদের প্রতি আমার স্পষ্ট বার্তা শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন। জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন।

তিনি বলেন, বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভলঘ্নে আমি বলতে চাই, স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে 'মাদার অফ ডেমোক্রেসি' বেগম খালেদা জিয়া দেশের ৮৭ হাজার গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। সেই দলের পতাকা এখন আমার আপনার

আমাদের হাতে। এই পতাকা এখন শুধু বিএনপির দলীয় পতাকাই নয়। এই পতাকা এখন দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, যারা এই পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে চান, তারা কোনো প্রকার অনৈতিক কিংবা অনধিকার চর্চায় লিপ্ত হবেন না। বাংলাদেশের জাতীয়বাদী শক্তির সকল স্তরের সকল পর্যায়ের প্রতি নেতাকর্মী সমর্থক শুভাকাঙ্খীকে মনে রাখতে হবে জনগণ বিএনপিকে বিশ্বাস করে। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। কারণ জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য।‘শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন’ তারেক রহমান



শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) লন্ডন থেকে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত/রাষ্ট্র পরিচালনা কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশে গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি দেশ এবং জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখেছে। এ কারণেই, শত প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়েও দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। যাদের নেতৃত্বে, যাদের আত্মত্যাগে/যাদের শ্রম ঘাম মেধায় বিএনপি আজ সারাদেশের জনগণের কাছে বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভলঘ্নে তাদের সবার অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, দেশ বর্তমানে ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আর অসংখ্য ছাত্র জনতার নিদারুন যন্ত্রণাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। তবে গণ অভুত্থানের সাফল্য এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি সর্তক থাকলে বাংলাদেশকে আর বিপথে নেয়া যাবেনা। আর পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ষড়যন্ত্র কিংবা অপপ্রচার চালিয়ে গত ১৫ বছরের অনাচার অবিচার জনগণকে ভুলিয়ে দেয়া যাবেনা। রাষ্ট্রীয় স্থাপনা গণভবন ছিল/দেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী স্মারক। গণভবন/বর্তমানে স্বৈরাচারী হাসিনার দুর্নীতি দুঃশাসন,অনাচার, অপকর্মের প্রতীক। ইতোমধ্যেই বিভিন্নমহল থেকে এই গণভবনকে গুম খুন অপহরণ এবং গণহত্যার মিউজিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে। ২০০৯ সালের পিলখানায় সেনাহত্যা থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বর হত্যাকাণ্ড, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৮, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সময় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ২০২৪ সালে গণ অভুত্থানে শহীদ এবং গুম হওয়া মানুষদের স্মৃতিগুলো এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত থাকবে। অবৈধ ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশে আর কোনো শাসক যাতে স্বৈরাচারী হাসিনার মতো বর্বরোচিত পথ অনুসরণ না করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই মিউজিয়াম সেই বার্তাই বহন করবে।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন গণ অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে এমন সময় হঠাৎ করেই চাপিয়ে দেয়া বন্যা পরিস্থিতি দেশের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চল গ্রাস করে নিয়েছে। বন্যার করাল গ্রাসে প্রায় এককোটি মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেক মানুষ মারা গেছেন। বিনষ্ট হয়েছে সম্পদ। এমন পরিস্থিতিতে, সাধ্যমতো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সকল কর্মসূচি বাতিল করেছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো এলাকায়/ বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন/ এই মুহূর্তে তাদেরকে বন্যা বিধ্বস্ত ঘরে ফেরানো কিংবা তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বন্যাকালীন পরিস্থিতি থেকেও কিছুটা জটিল। সুতরাং, আপনারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখুন। সমন্বিতভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ান। বিশেষ করে যেসব পরিবারে নারী শিশু বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা রয়েছেন অগ্রাধিকারভিত্তিতে তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ান। সফলজনকভাবে বন্যা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একজন নাগরিক হিসেবে সরকারি উদ্যোগ বাস্তবায়নেও সক্রিয় ভূমিকা রাখুন।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র রাজনীতি শিক্ষা সংস্কৃতি অর্থনীতি জন প্রশাসন বিচারবিভাগ সকল ক্ষেত্রে দেশকে এক নৈরাজ্যকর অবস্থায় রেখে/স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়েছে। দেশকে একটি ঋণ নির্ভর আমদানি নির্ভর পর নির্ভর রেখে স্বৈরাচারী হাসিনা পালিয়েছে। শুধুমাত্র একজন হাসিনাই পালিয়ে যায়নি। তার বিনাভোটের মন্ত্রিসভা, বিনা ভোটের সকল এমপি এমনকি তাদের নিয়োগ দেয়া বায়তুল মোকাররমের খতিব পর্যন্ত পালিয়েছে। দেশের এমন নজিরবিহীন ভয়ানক পরিস্থিতি অতিক্রম করে জনগণ এখন সম্মান এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে চায়। তাই দেশকে জনতার কাঙ্খিত বাংলাদেশে রূপান্তর করতে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের বিকল্প নেই। তবে রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান, দীর্ঘমেয়াদি এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। টেকসই এবং কার্যকর উপায়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ জরুরি। গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলোতে জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। কারণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার এবং জনগণের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধন হচ্ছে জনপ্রনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ।

তিনি বলেন, জনগণের লুন্ঠিত ভোটের অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে/একটি জনপ্রনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী,জন প্রশাসন, দুদকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কিংবা পুনর্গঠন জরুরি। সেই লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। সুতরাং, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জনপ্রনিধিত্বশীল রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনের লক্ষ্যে দেশকে নির্বাচনী রোডম্যাপে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবরকমের সহায়তা করতে প্রস্তুত।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আমি মনে করি আমাদের দল বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র সংস্কারকে কার্যকর করতে হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সে লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে/রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি দলীয় রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিএনপি সকল মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা প্রবর্তন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা পরপর দুই টার্মের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন না করা ‘উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা’ প্রবর্তন এমনকি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয়ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাসহ রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য ৩১ দফা রূপরেখা দিয়েছে। আমি মনে করি আমাদের দল বিএনপি মনে করে জনগণের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গঠনের জন্য রাষ্ট্র ও রাজনীতি সংস্কারের বিকল্প নেই। দীর্ঘমেয়াদি রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমগুলো জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে হলে সেটি বেশি কার্যকর বলেও জনগণ বিশ্বাস করে। গণতান্ত্রিক বিশ্বেও এটি স্বীকৃত।

তিনি বলেন, আমাদের আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। পলাতক স্বৈরাচার জাতীয় জীবনের ১৫টি বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই দুঃস্বপ্নকে দূরে ঠেলে দিয়ে দেশের জনগণের সামনে একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গড়াই বিএনপির আগামীদিনের লক্ষ্য। বিএনপি বিশ্বাস করে তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান বিশ্বে/ কথামালার রাজনীতির পরিবর্তে বর্তমান প্রজন্ম প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। সমৃদ্ধি-সম্মান-এবং সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত দেখতে চায়। এ জন্য রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এবং কর্মক্ষম জনশক্তির সামনে সম্ভাবনার সকল দরজা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধ এবং কর্মমুখী শিক্ষানীতির পাশাপাশি দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে। বৈদেশিক কর্মসংস্হান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে অগ্রাধিকারভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরী করতে হবে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এবার আমি সারাদেশে আমার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো কয়েকটি কথা বলতে চাই। আপনারাই বিএনপির প্রাণ। শত নির্যাতন নিপীড়ণ হামলা মামলা হয়রানি শিকার হয়েও আপনারা জাতীয়তাবাদের আদর্শ বিচ্যুত হননি। আমি জানি, অতীতে বছরের পর বছর ধরে আপনাদের অনেকেই মাফিয়া সরকার এবং তাদের দোসরদের দ্বারা নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন। তবে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপনাদের প্রতি আমার একটি অনুরোধ অতীতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে আপনারা কেউ প্রতিশোধ পরায়ণ হবেন না। কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। বরং অন্যায় অবিচারের শিকার হলে আইনগত পদক্ষেপ নিন। তবে খেয়াল রাখবেন কেউ যেন হয়রানিমূলক হামলা-মামলার শিকার না হন।

আপনাদের প্রতি আমার স্পষ্ট বার্তা শক্তি কিংবা ভয় দেখিয়ে নয় ইনসাফ এবং উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন। জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন।

তিনি বলেন, বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভলঘ্নে আমি বলতে চাই, স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে 'মাদার অফ ডেমোক্রেসি' বেগম খালেদা জিয়া দেশের ৮৭ হাজার গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। সেই দলের পতাকা এখন আমার আপনার

আমাদের হাতে। এই পতাকা এখন শুধু বিএনপির দলীয় পতাকাই নয়। এই পতাকা এখন দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, যারা এই পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে চান, তারা কোনো প্রকার অনৈতিক কিংবা অনধিকার চর্চায় লিপ্ত হবেন না। বাংলাদেশের জাতীয়বাদী শক্তির সকল স্তরের সকল পর্যায়ের প্রতি নেতাকর্মী সমর্থক শুভাকাঙ্খীকে মনে রাখতে হবে জনগণ বিএনপিকে বিশ্বাস করে। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। কারণ জনগণই বিএনপির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস্য।





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে





তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ