Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Tuesday 17th September 2024
ভ্রমন
পর্যটক বাড়ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি কুমিল্লায়
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 01-Oct-2018

পর্যটক বাড়ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি কুমিল্লায়

সাননিউজবিডি ডটকম ডেস্ক: পত্নতাত্বিক নিদর্শন আর ছায়াঘেরা সবুজ প্রকৃতির অপরূপ শোভায় সুশোভিত কুমিল্লায় বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা। ঢাকা-চট্টগ্রামের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত প্রাচীন এ জেলাজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন স্থান। বিশেষ করে কোটবাড়ি শালবন বিহার, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বার্ড, ময়নামতি জাদুঘর ও আশপাশের এলাকা ঘিরেই ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা যায়। যোগাযোগ মাধ্যম সহজ হওয়ার ফলে কুমিল্লায় সারাবছরই দেশ-বিদেশের পর্যটক দর্শনার্থীদের উপস্থিতি চোখে পড়ে।

ত্রিপুরার রাজারা এক সময় গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপন কেন্দ্র হিসেবে গোড়াপত্তন করেছিলেন গোমতীর তীরের এই কুমিল্লার। সমতটের এ জনপদে রয়েছে আদি নিদর্শন শালবন বিহার,র’ পবানমুড়া, ইটাখোলামুড়া, ময়নামতি ঢিবি, রানীর বাংলো, ময়নামতি জাদুঘর আরও আছে অপূর্ব প্রাকৃতিক ঘেরা সবুজ বৃক্ষবেষ্টিত লালমাটির লালমাই পাহাড় প্রাচীন সভ্যতার নীরব সাক্ষী। সেই সাথে রয়েছে কমনওয়েলথ যুদ্ধে শহীদদের সমাধিস্থল ‘ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি’। দৃষ্টিনন্দন এ স্থানটিও রয়েছে পর্যটকদের ঘুরে দেখার তালিকায় তালিকায়।

এছাড়াও কুমিল্লা নগরীর ধর্মসাগর, চিড়িয়াখানা ছাড়াও নগরীর পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা গোমতী নদীটিও হয়ে উঠেছে পর্যটনের কেন্দ্র বিন্দু। বিশেষ করে নাগরিক জীবনের ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে স্বস্থির অন্বেষায় থাকা মানুষগুলো ভিড় জমায় বিকেলের গোমতী পাড়ে। তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে সর্পিল গোমতীর দু’ধার।

শালবন বিহার: কুমিল্লার ঐতিহ্য ধারণকারী স্থাপনাগুলোর মধ্যে পর্যটকদের প্রথম পছন্দ শালবন বৌদ্ধ বিহার। পূর্বে এই প্রত্মস্থানটি শালবন রাজার বাড়ি নামেই পরিচিত ছিল। ১১৫টি ভিক্ষুকক্ষ বিশিষ্ট বিহারটির মধ্যভাগে একটি মন্দির ও উত্তর দিকের মাঝামাঝি স্থানে প্রবেশ তোরণ এটির বিশেষ আকর্ষণ। এখানে প্রাপ্ত পোড়ামাটির মুদ্রা বিশ্লেষণে জানা যায়, দেব বংশের ৪র্থ রাজা শ্রী ভবদেব খ্রিষ্টীয় আট শতকে এ বিহারটি নির্মাণ করেন।

ধূসর লাল রঙের বড় ইটের গাঁথুনিতে প্রাচীন সভ্যতার এ প্রত্মতাত্বিক স্থাপনা দেখতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। একক ভ্রমণের পাশাপাশি এখানে দেশের দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা সফরে আসেন। ঐতিহাসিক এ স্থাপনাটি দেখতে দেশি-বিদেশি পর্যটক ভীড় ক্রমে বেড়েই চলছে।

এর পাশেই রয়েছে ময়নামতি জাদুঘর। যেখানে সংরক্ষিত আছে খননের সময় এ বিহারে প্রাপ্ত প্রাচীন পুড়া মাটির ফলক মূর্তি ও মুদ্রা। এছাড়াও জেলা প্রাপ্ত সকল প্রতœতাত্বিক নিদর্শন এ জাদুঘরেই সংরক্ষণ করে রাখা হায়। বর্তমানে যাদুঘরটিতে রয়েছে দর্শনীয় সব পুরাকীর্তি এবং বিভিন্ন রাজবংশীয় ইতিহাস, ব্যবহৃত তৈজসপত্র, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, বেত্রাঞ্জের ছোট ছোট বুদ্ধ মুর্তি, দেব-দেবির মূর্তি, পোড়া মাটির ফলকচিত্র, অলংকৃত ইট, পাথরের মূর্তি, মাটি ও তামার পাত্র, দৈনন্দিন ব্যবহার সামগ্রী- দা, কাস্তে, খুন্তি, কুঠার, ঘটি, বাটি, বিছানাপত্র ইত্যাদি।

যাদুঘরের পাশে বন বিভাগ নতুন ২টি পিকনিক স্পট করেছে। বাংলাদেশে বেশ কয়টি জাদুঘরের মধ্যে ময়নামতি উল্লেখযোগ্য।

জানা গেছে, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের আগষ্ট মাস পর্যন্ত শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরে এসেছিলেন প্রায় ৬ লাখ দর্শনার্থী। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক ছিলো ২ সহস্রাধিক। সময়ের সাথে সাথে যার পরিমাণ আরো বাড়ছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারের কাস্টরিয়ান (জিম্মাদার) ড. আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, সারা বিশ্বেই শালবন বিহারের আলাদা একটা ভাবমূর্তি রয়েছে। এখানে যেমন দেশি পর্যটক রয়েছে তেমনি বিদেশি পর্যটকও রয়েছে। আর দিন-দিন এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে শালবন বিহারের পর্যটকদের কাছ থেকে সরকার রাজস্ব আয় করেছে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। আমরা আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয় একাডেমী (বার্ড) : কুমিল্লায় ঘুরতে আসবেন অথচ বার্ড দেখবেন না- তা কী করে হয়? এখানে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে ছায়া সুনিবিড়, মায়া-মমতায় ঘেরা রাস্তা, নির্জন প্রাকৃতি পরিবেশন। দু’পাশে নানা রকম রং-বেরংয়ের ফুল ও ফলের বাগান। পাখির কূজন আর ফুলের গন্ধ চারদিক ঘিরে রেখেছে বার্ডকে। বার্ডের ভিতরে রয়েছে নীলাচল পাহাড়। নির্জন প্রকৃতির এক অকৃত্রিম ভাললাগার জায়গা হচ্ছে নীলাচল।

বার্ড মূলত বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত মানুষের প্রশিক্ষণ একাডেমি। এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে ফি লাগে না, তবে অনুমতি নিতে হবে। বার্ডের ভেতরের সুন্দর রাস্তা দিয়ে সামনে এগুলেই দুই পাহাড়ের মাঝখানে দেখতে পাবেন অনিন্দ্যসুন্দর বনকুটির। ১৯৫৯ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) প্রতিষ্ঠা করেন ড. আখতার হামিদ খান।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি : ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, কুমিল্লাতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ, কানাডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান, আফ্রিকান, জাপানী, আমেরিকান, ভারতীয় ও নিউজিল্যান্ডের ৭৩৭ সৈন্যের সমাধিস্থল এটি। নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে প্রতিবছর প্রচুর দেশী-বিদেশী দর্শনার্থী এ সমাধিক্ষেত্রে আসেন। এটি ১৯৪৬ সালে তৈরি হয়েছে।

কুমিল্লা নগর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ছায়াঘেরা স্নিগ্ধ নৈসর্গিক পরিবেশে অবস্থিত ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি। সকাল ৭টা-১২টা এবং দুপুর ১টা-৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা এখানে প্রবেশের সুযোগ পান। আর এ সময়টাতেই বছরজুড়ে এর প্রবেশ গেইটের সামনে মানুষের ভিড় দেখা যায়।

রানী ময়নামতির বাংলো : জেলার বুড়িচং উপজেলার সাহেববাজারের কাছে আছে রানী ময়নামতির প্রাসাদ। স্থানীয়রা ‘একে বলে রানীর বাংলো।’ অষ্টম শতকের এ স্থাপনাটি লালমাই পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। রানীর বাংলোটির দেয়াল উত্তর-দক্ষিণে ৫১০ ফুট লম্বা ও ৪শ’ ফুট চওড়া। সেখানে স্বর্ণ ও পিতলের দ্রবাদি পাওয়া গেছে। লালমাই পাহাড় ও রাণীর প্রাসাদ ঘিরে প্রতিদিনই অংসংখ্য দর্শনার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে





তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ