Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Sunday 8th September 2024
ইসলামী জগৎ
মসজিদে যেতে না পারলেও যেভাবে জুমা পড়া যায়
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 11-Aug-2023

মসজিদে যেতে না পারলেও যেভাবে জুমা পড়া যায়



সাননিউজবিডি ডটকম ডেস্ক॥ইসলামী জগৎ॥ জুমার নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। মসজিদে যেতে না পারলেও জুমা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। কেননা জুমা আদায়ের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত। আর জুমা আদায়ের নির্দেশে মহান আল্লাহ তাআলা স্বতন্ত্র আয়াত নাজিল করেছেন।

কিন্তু যদি কোথাও মসজিদ পাওয়া না যায় কিংবা কোনো কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না হয় তবে কীভাবে জুমা আদায় করবেন? মসজিদ পাওয়া না গেলে কিংবা মসজিদে যেতে না পারলে কি জুমা পড়া যাবে না? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?

মুসলমানদের সপ্তাহিক নির্ধারিত ইবাদত হচ্ছে জুমা। জুমআর দিন নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে যাওয়া এবং নামাজ আদায় করার চেয়ে বড় আমল বা ইবাদত আর কিছু নেই। কেননা মহান আল্লাহ তাআলা এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে-

হে ঈমানদারগণ! জুমআর দিন যখন তোমাদের নামাজের জন্য আজান তথা আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা দ্রুতগতিতে আল্লাহর স্মরণে (নামাজের দিকে) ধাবিত হও আর বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। তোমরা যদি জ্ঞানী হও তবে এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। অতপর যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা (নিজ নিজ কাজে) ছড়িয়ে পড়। আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অন্বেষণে লেগে যাও। আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর, যেন তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)

মসজিদ পাওয়া না গেলে জুমা আদায়ের শর্ত

মসজিদে সমবেত হয়েই সাধারণত জুমা পড়া হয়। যদিও হানাফি মাজহাবে জুমা আদায়ে যেমন মসজিদ শর্ত নয়, আবার বড় জামাআতও শর্ত নয়। তারপরও সার্বিক বিবেচনায় মসজিদে নামাজ পড়াই সর্বোত্তম।

তাই কোথাও যদি মসজিদ পাওয়া না যায় বা মসজিদে যেতে কোনো অসুবিধা থাকে তবে সেক্ষেত্রেও জুমা ছেড়ে না দিয়ে সম্ভব হলে তা আদায়ের ব্যবস্থা করা অনেক ফজিলতপূর্ণ কাজ ও আল্লাহর নির্দেশ পালনের শামিল।

সমস্যা থাকলে জুমা আদায়ের জন্য ইমাম ছাড়া কমপক্ষে ৩ জন মুসল্লি হওয়া জরুরি। তিন জন মুসল্লির কম হলে জুমা আদায় হবে না। অর্থাৎ ইমাম মুয়াজ্জিনসহ কমপক্ষে ৪ জন মিলে জুমা আদায় করতে পারবে। এর কম হলে জুমা হবে না।

মনে রাখা জরুরি: মহামারি আক্রান্ত অঞ্চল, বিপদজনক এলাকা কিংবা মসজিদ দূরে হলে কিংবা মসজিদ পাওয়া না গেলে যদি সেখানে মুসল্লির সংখ্যা বেশি হয় বা জুমা আদায়ের জন্য নির্ধারিত সংখ্য ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ৪ জন কিংবা তার অধিক লোক থাকে তবে সেখানে জুমা ও আজান দেয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা কী হতে পারে?

হ্যাঁ, মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর বিশ্বব্যাপী অনেক দেশ এ পরিস্থিতে পড়েছে। ওলামায়ে কেরাম এ পরিস্থিতিতে আজান ও নামাজ সম্পর্কে দিয়েছেন সুস্পষ্ট মতামত। আর এ মতামতই জুমা ও আজান দেয়ার ক্ষেত্রে সবার জন্য প্রযোজ্য।

আজান: বিপদজন বা অস্বাভাবিক মুহূর্তে আজানে ‘হাইয়্যা আলাস-সালহ’ এর পরিবর্তে দুইটি শব্দ ব্যবহার করেছে। কেউ বলেছেন- আসালাতু ফি বুয়ুতিকুম, আবার কেউ বলেছে ‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ শব্দগুলোর অর্থ হলো- তোমরা তোমাদের বাড়িতে অবস্থান করে নামাজ পড়।

এভাবে আজান দেওয়া এবং বাড়িতে নামাজ পড়া নিষেধ নয়। হাদিসে এসেছে- হজরত নাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, প্রচণ্ড এক শীতের রাতে হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যাজনান নামক স্থানে আজান দিলেন। অতপর তিনি ঘোষণা করলেন- صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ

‘সাল্লু ফি রিহালিকুম’ অর্থাৎ তোমরা আবাস স্থলেই নামাজ আদায় করে নাও।’

পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘লাইহি ওয়া সাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)

জুমা আদায়: আবার দুর্যোগের কারণে মসজিদের জামাআতে নামাজ ত্যাগের যেমন অবকাশ আছে তেমনি প্রয়োজনে মসজিদে জুমা বন্ধ রাখার নির্দেশ আসলেও সেটা পালনে ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে তা অসম্ভব নয়। আর মসজিদে যাওয়া ঝুঁকি কিংবা মসজিদ পাওয়া না গেলেও জুমা আদায় করা অসম্ভব নয়।

কেননা হানাফি মাজহাবে জুমা আদায়ের জন্য যেমন মসজিদ শর্ত নয় আবার বড় জামাআতও শর্ত নয়। অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম পরিস্থিতির আলেঅকে ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ মোট ৪ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে মসজিদে কিংবা মসজিদের বাইরে জুমা আদায়ের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।

তাছাড়া ইমাম আবু ইউসুফ রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে, ইমাম ছাড়া ২ জন থাকলেই জুমা আদায় করা যায়।

সুতরাং মহামারির বিপদ, জীবনের হুমকি, মসজিদ না থাকলে বা মসজিদ খুঁজে না পেলে বা কোনো সমস্যা থাকলে ফজিলতপূর্ণ সপ্তাহিক নামাজ জুমা আদায়ে ইমাম-মুয়াজ্জিনসহ ৪জন ব্যক্তি থাকলেই বাড়িতে কিংবা মসজিদ ছাড়াও জুমা আদায় করা যাবে।

জুমা আদায়ের গুরুত্ব: হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি গোসল ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পরে জুমার জন্য মসজিদে আসে আর নির্ধারিত সুন্নাত আদায় করে চুপচাপ বসে (খুতবা শোনে) থাকে, ইমাম খুতবা থেকে অবসর হলে ইমামের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করে, তখন তার এক জুমা থেকে আরেক জুমআ পর্যন্ত আরও তিন দিনেরসহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’

হজরত ইয়াজিদ বিন মরিয়ম বলেন, আমি জুমার নামাজের জন্য যাচ্ছিলাম পথিমধ্যে আবায়া বিন রেফায়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে গেল, তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় যাচ্ছ? আমি উত্তর দিলাম জুমআর নামাজ পড়তে যাচ্ছি। তিনি বললেন, তোমার জন্য শুভকামনা। এটাতো আল্লাহর পথে চলা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে বান্দার পা আল্লাহর পথে ধুলায় মলিন হলো তার উপর (জাহান্নামের) আগুন হারাম।’

সুতরাং বুঝা যায়, জুমার নামাজের প্রস্তুতি, খুতবা শোনা, নামাজ আদায় করা এবং জুমার উদ্দেশ্যে এক কদম বাড়ানোর মধ্যেও রয়েছে অনেক সাওয়াব।

তাই জুমার দিন সমস্যার কারণে মসজিদে যেতে না পারলে বা মসজিদ না পাওয়া সাপেক্ষে সুযোগ থাকলে কিংবা সম্ভব হলে নির্ধারিত সংখ্যক মুসল্লি পাওয়া গেলেই জুমা আদায় করা যেতে পারে। আর তাতে ক্ষমা হবে সপ্তাহসহ আরে তিন দিনের গোনাহ। আর হারাম হয়ে যাবে জাহান্নাম।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মসজিদে গিয়ে জুমা আদায় করার তাওফিক দান করুন। পরিস্থিতির আলোকে মসজিদে যেতে না পারলেও বিকল্প হিসেবে জুমা আদায়ে সচেষ্ট হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে





তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ