Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Thursday 21st November 2024
গল্প
স্রোতের বিপরীতে সফলতা অর্জন সহজ নয়
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 05-Jul-2022

স্রোতের বিপরীতে সফলতা অর্জন সহজ নয়



পিটার ব্রুক

গল্প বলার এক সেরা মাধ্যম মঞ্চ—থিয়েটার বলে যেটা পরিচিত। চলচ্চিত্র আসার আগে থিয়েটারই ছিল সৃজনশীল বিনোদনের অন্যতম প্লাটফর্ম। মঞ্চ নিয়ে তাই নানা সময়ে নিরীক্ষা হয়েছে। বহু অভিনেতা ও নির্মাতা বদলে দিয়েছেন মঞ্চকে। পিটার ব্রুক তাদের মধ্যে অন্যতম। দূরদ্রষ্টা ও বহু নাটকের স্রষ্টা ব্রুক এ পৃথিবী ছেড়ে গেলেন গত শনিবার। তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।

স্ট্র্যাটফোর্ডের রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছেন পিটার। বদলে দিয়েছিলেন থিয়েটারের সনাতন ধারাকে। প্যারিসের সংগীতের ব্যবহার ও মঞ্চের সজ্জা বদলে তিনি নতুন ধারার কাজ শুরু করেন। সব ধরনের বাহুল্য বর্জন করে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়ার কারণে তিনি প্রশংসিত। ১৯৭০ সালে তার করা রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানির ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিম’ কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে যায়। ঘনক আকৃতির স্টেজে ট্র্যাপিজ, স্টিলের জঙ্গল তৈরি করে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এ নাটকের অন্যতম অভিনেতা ছিলেন বেন কিংসলে। গার্ডিয়ানের সঙ্গে পিটার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও তার চলে যাওয়া এক ধরনের শূন্যতা তৈরি করবে কিন্তু তার সঙ্গে কাজ করা ব্যক্তিরা তার প্রতিভা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তারা পিটারকে মনে রাখবেন ও ভালোবাসবেন।’

শেকসপিয়ারের নাটক পরিচালনা করতে গিয়ে তিনি বহু নামি ও প্রতিভাবান অভিনেতা-অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে লরেন্স অলিভিয়ার, পল স্কফিল্ড, আদ্রিয়ান লেস্টার ও নাতাশা প্যারি অন্যতম। নাতাশা প্যারি ছিলেন পিটার ব্রুকের সহধর্মিণী। কেবল রোমান্টিক বা ট্র্যাজিক ড্রামাই নির্মাণ করেননি ব্রুক। তার কাজের তালিকায় আছে বহু মিউজিক্যাল ড্রামা। তিনি ভিয়েতনামের যুদ্ধবিরোধী নাটক করেছেন। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও প্রশংসিত কাজ মহাভারত। ৯ ঘণ্টাব্যাপী এ নাটক থিয়েটারের ইতিহাসেই একটি ল্যান্ডমার্ক বলে বিবেচিত।

মঞ্চ, নাটক ও নাটকের উপস্থাপন নিয়ে তার নিরীক্ষা ছিল অসামান্য। স্টেজ বলতে তার জন্য সাজানো গোছানো উঁচু পাটাতনের প্রয়োজন ছিল না। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত ‘দি এম্পটি স্পেস’ বইয়ের শুরুতে তিনি লিখেছেন, ‘আমি যেকোনো একটি ফাঁকা জায়গা নিয়ে সেটাকে খোলা মঞ্চ বলতে পারি। থিয়েটারের কোনো অভিনয় উপস্থাপনের জন্য একজন মানুষ প্রয়োজন, যে এই মঞ্চে হেঁটে যাবে এবং তাকে দেখার মতো একজন অন্তত দর্শক থাকবে।’ কেনেথ টাইনানের ভাষায় ব্রুক ছিলেন একজন ‘থিয়েট্রিক্যাল গরমেট’ যিনি ননী, রক্ত ও মসলা নিয়ে গল্পকে উপস্থাপন করেন। অর্থাৎ, একজন দক্ষ পাচক। ব্রুক সিনেমায়ও কাজ করছেন। ১৯৬৩ সালে ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইস’ থেকে একটি সিনেমা নির্মাণের পাশাপাশি অপেরায় ‘কারমেন’ ও ‘দ্য ম্যাজিক ফ্লুট’ পরিচালনা করেছেন।

ব্রুকের নাট্যজীবন তার সাত বছর বয়সেই (জন্ম ১৯২৫ খ্রি.) শুরু হয়। আর শুরুটা ছিল হ্যামলেট দিয়ে। মাগদালেন কলেজে পড়াশোনার পর তিনি রয়্যাল অপেরা হাউজে যোগ দেন। সেখানে রিচার্ড স্ট্রসের অপেরা ‘সালোম’ পরিচালনা করেন। ড্রামাটির ডিজাইনার ছিলেন সালভাদর দালি। ১৯৫৫ সালে তিনি লরেন্স অলিভিয়ারের নির্দেশক ছিলেন। ১৯৬০ সালে পিটার হল রয়্যাল শেকসপিয়ার কোম্পানির আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হলে পিটার ব্রুককে তার সহকারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৯৭০ সালে পিটার প্যারিসে যান এবং সেখানে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিয়েটার রিসার্চ শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ব্রুকের নেতৃত্বে আফ্রিকায় নাটক আয়োজন করা হয়। প্রথাগত থিয়েটারে ব্যবহার করা হয় এমন কোনো অনুষঙ্গ এ আয়োজনে ব্যবহার করা হয়নি। পিটারের ভাষায়, ‘আমরা এমন দর্শকের সামনে নাটক উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম, যারা কোনো নির্দিষ্ট ধারায় অভ্যস্ত নন। আমরা কোনো থিম বা নামও রাখিনি।’

পিটার ব্রুক হ্যামলেট চরিত্রে স্কোফিল্ড ও লেস্টারকে অর স্ক্রিন ও মঞ্চ উভয় ক্ষেত্রে কাস্ট করেছেন। তার পরিচালিত মহাভারতও টিভি সিরিজ হিসেবে জনপ্রিয়তা পায়। পিটার ব্রুক প্রথাগত নাটকের বাইরে গিয়ে নিজের মতো নাটক তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। ২০১৭ সালে মাইকেল ব্রাইটনের সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, ‘স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে আমাদের পছন্দের কাজের ক্ষেত্রে কিছু অর্জন করা সহজ নয়। নিয়তি নির্ধারণ করেছিল আমি থিয়েটারে সে কাজটা করব এবং সেক্ষেত্রে আমার দায়িত্ব হচ্ছে যথাসম্ভব ইতিবাচক ও সৃজনশীল থাকা।’ পিটার ব্রুক তা করেছিলেন বলেই শিল্পী ও নির্মাতাদের মধ্যে তিনি সম্মানের আসন নিয়ে বেঁচে থাকবেন।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে


এই মুহুর্তের শীর্ষ খবর



তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ



সর্বাধিক পঠিত