Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Friday 18th October 2024
গল্প
শতবর্ষ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 19-Mar-2021

শতবর্ষ পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু

কাওসার রহমান

বাংলার বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নতুন জন্মানো একটি দেশের ‘পিতা’! সমগ্র ইতিহাসজুড়ে তারকাসুলভ এমন রাজনৈতিক নেতা খুব বেশি পায়নি বাঙালী। তাইতো তিনি বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। যিনি বাঙালী জাতিকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন জাতিরূপে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ফলে, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু আজ একাত্ম। হাজার বছরে কোন বাঙালী যে কাজটি করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু তা করে দেখিয়েছেন। অতীশ দীপঙ্কর, শ্রী চৈতন্য, রামমোহন রায় থেকে রবীন্দ্রনাথ, চিত্তরঞ্জন দাশ বা নেতাজি সুভাস বসুর কেউই একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারেননি। একমাত্র পেরেছেন বঙ্গবন্ধু। একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই সংগ্রাম করে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জাতিরাষ্ট্র তৈরি করতে পেরেছেন। তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে কারও তুলনা হয় না।

বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দেশ বিভাগের পর তথাকথিত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিক্তিতে উদ্ভুত রাষ্ট্র পাকিস্তানের তখনকার পূর্বাংশের পৃথক সত্তাটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তিনি অচিরেই অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। যেহেতু তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকেই নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন, সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার স্বরূপটা তিনি বুঝতে পারতেন। দুই অংশের মধ্যে বৈষম্যের যে পাহাড় তৈরি হয়েছিল সেটাকে তুলে ধরতে কুণ্ঠিত ছিলেন না কখনও। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সিংহভাগই কাটে বিরোধী রাজনীতিক হিসেবে। পাকিস্তানী শাসকদের হাতে কারারুদ্ধ হয়েছেন বারবার। কিন্তু কখনও মুচলেকা দিয়ে প্যারোলে জেল থেকে মুক্ত হননি। এমনটাও হয়েছে যে ছাড়া পেয়ে জেলগেট থেকে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে নতুন মামলা দিয়ে আবার তাঁকে কারাকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণা করলেন তিনি। এ যেন পাকিস্তান থেকে মুক্ত হবার এক প্রাথমিক সনদ। ছয় দফা ১১ দফায় রূপান্তরিত হলো ঊনসত্তরের প্রবল ছাত্র তথা গণঅভ্যুত্থানের মুখে। কারাবন্দী শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো ইসলামাবাদ সরকার। স্বৈরশাসক আইউব খানের পতন ঘটল। আবার সামরিক শাসন জারি হলো জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙ্গনের বীজ রোপিত হয়ে গেল তখনই।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হলেও, সে ফল মানতে রাজি ছিল না পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসন লাভ করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে চলতে থাকে টালবাহানা। আলোচনার পর আলোচনা ব্যর্থ হয়। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদের বৈঠক স্থগিত করার ঘোষণা দিলে সারা বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। হরতাল পালিত হয় ৩ মার্চ। ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্সের জনসমুদ্রের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ সোপান। তাই আজ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো এই ভাষণটিকে বিশ্বের তথ্যমূলক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দিয়ে সম্মানিত করেছে। এই ভাষণের পর বাঙালীদের পিছন ফিরে তাকানোর আর কোন কারণ ছিল না। ৭ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই চালিত হয়েছে সব কর্মকা-। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর। আক্রমণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, পিলখানা রাইফেল সদর দফতর ও রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন। তাঁর আগে দিয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষণা।

২৬ মার্চ ১৯৭১ সন্ধ্যায় স্বাধীনতার এই ঘোষণাই বারবার পাঠ করা হয় চট্টগ্রামের কালুরঘাটে বেতারের ট্রান্সমিটার স্টেশন থেকে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার নাম দিয়ে প্রচারিত অনুষ্ঠানে। এর আগে দুপুরবেলা ট্রান্সমিটার খুলে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতা এম.এ. হান্নান। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের সেই সূচনালগ্নে সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে যুক্ত হয়েছিলেন বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সন্দ্বীপ। কালুরঘাটের এই কেন্দ্র থেকেই ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে -ড়হ নবযধষভ ড়ভ ড়ঁৎ মৎবধঃ ষবধফবৎ ইধহমধনধহফযঁ ঝযবরশয গঁলরনঁৎ জধযসধহ- কথাটি উল্লেখ করে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

বঙ্গবন্ধুর কাক্সিক্ষত স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বসভায় তার স্থায়ী আসন অধিকার করে নিয়েছে। পথটি কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ঈপ্সিত স্বাধীনতাও অর্জিত হয়েছে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চালিত এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, লাখ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে। বাঙালী সৈনিকদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন সাধারণ মানুষ- ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষ। তরুণরা হাতে তুলে নেয় হাতিয়ার, এগিয়ে আসেন বহু নারী। মুক্তিযোদ্ধারা দখলীকৃত এলাকায় গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে পর্যুদস্ত করে দেয় পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীদের। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করতে মুজিবনগরে গঠিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। এই প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব অসীম ধৈর্য আর যোগ্যতার সঙ্গে পালন করেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সরকার এই প্রবাসী সরকারকে দেন সব রকমের সাহায্য আর সমর্থন। আশ্রয় দেন পূর্ববঙ্গ থেকে পালিয়ে আসা এক কোটি শরণার্থীকে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ও মুক্তির এই লড়াই প্রত্যক্ষ করতে পারেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন্দীদশার কারণে। কিন্তু গোটা যুদ্ধতেই ছিল যেন তাঁর উপস্থিতি। তাঁরই নামে চালিত হয় মুক্তিযুদ্ধ, সশরীরে উপস্থিত না থেকেও তিনিই ছিলেন ঘোষিত স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, সর্বসম্মত নেতা। তাঁর মুক্তির জন্য ইন্দিরা গান্ধী ছুটে বেরিয়েছেন এক দেশ থেকে আর এক দেশে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন একের পর এক বাঙালী কূটনীতিক, আমলা। পালিয়ে এসে যুক্ত হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের কাজে। পাকিস্তানে আটক বাঙালী সেনা অফিসারদের কেউ কেউ প্রাণের তোয়াক্কা না করে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে পৌঁছে গেছেন মুজিবনগরে। যোগ দিয়েছেন মুক্তি বাহিনীতে। স্বাধীনতার যে ডাকে এদেশের মানুষ সাড়া দিয়েছিল সেই ডাকটি এসেছিল যাঁর কাছ থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসে। ঢাকায় অস্ত্র সমর্পণ করে পাকিস্তানী সেনারা ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে। ২২ ডিসেম্বর প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ সব মন্ত্রী ও নেতা ঢাকায় ফিরে আসেন, নিশ্বাস ফেললেন মুক্ত স্বদেশভূমিতে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাপ্তি পূর্ণতা পায় ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বাধীন রাষ্ট্রের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে। সম্পদহীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের কর্ণধার হন তিনি। একের পর এক সমস্যা এসে উপস্থিত হয়। তবুও তার মোকাবিলা করতে কখনও পিছপা হননি তিনি। ভারতের সক্রিয় সাহায্য ও সমর্থনের জন্য ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েও কি দ্রুত তিনি বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনীর দেশে ফিরে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ১২ মার্চ ১৯৭২ সালে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তাঁরই দূরদর্শিতার ফলে বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২৫ সেপ্টেম্বর তিনিই প্রথম বাংলায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন। কিন্তু দেশটিকে একটি সুসংহত অবস্থান দেয়ার আগেই দেশী-বিদেশী কুচক্রের শিকার হতে হয় তাঁকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানম-ির বাসভবনে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক অফিসারের হাতে সপরিবারে নিহত হন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান। জার্মানিতে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

শেখ মুজিবের বড় পুঁজি ছিল, আত্মত্যাগের সাহস, এমনকি দুঃসাহস। কৈশোর থেকে শুরু করে কত সময় যে মুজিব কারাগারে কাটিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। চল্লিশ ও পঞ্চাশ ষাটের দশকে। পাকিস্তান আন্দোলনের জন্য তাঁর নেতা সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে জানপ্রাণ দিয়ে খেটেছেন, মুসলিম লীগের যুবকর্মী হিসেবে সারা বাংলা চষে বেরিয়েছেন। তবুও পাকিস্তান হওয়া মাত্র সরকারের বিষনজরে পড়েছেন, একের পর এক গ্রেফতারের পালা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯-এর মধ্যে তিন-তিন বার জেলে গেছেন, কত বার একাকী বন্দী বা সলিটারি কনফাইনমেন্টে থেকেছেন। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি গভীর রাতে তাঁকে এক জেল থেকে মুক্ত করে কারাগারের গেট দিয়ে বার করতেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ষড়যন্ত্রের ভুয়া অভিযোগে তাঁকে আবার গ্রেফতার করে। মানুষ জানতেও পারে না যে, তিনি বেঁচে আছেন কি নেই।

১৯৬৯ সালে ৫ ডিসেম্বর তারিখটি লাল কালিতে রাঙিয়ে রাখার মতো। তাঁর প্রিয়তম নেতা শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তানের একটি নতুন নাম দিলেন: বাংলাদেশ। বললেন, ‘এক সময় এ দেশের বুক থেকে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা থেকে ‘বাংলা’ কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ... একমাত্র বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোন কিছু নামের সঙ্গে ‘বাংলা’ কথাটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় নাই। জনগণের পক্ষ থেকে আমি ঘোষণা করছি আজ থেকে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর পরিবর্তে শুধু ‘বাংলাদেশ’।’

একটা দেশকে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করা সহজ কথা নয়। পাকিস্তানের জন্মের পর যে অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় পূর্ব পাকিস্তানে, এক হাতে তার জট ছাাড়াতে ছড়াতে, আর এক হাতে সেই জটিলতাকে মূলধন করে একটা বিস্ফোরক আন্দোলন তৈরি করার কাজটা সহজ ছিল না সেদিন। বাংলাদেশ তৈরির লড়াইকে গোটা বিশ্বের কাছে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ আন্দোলন হিসেবে না দেখিয়ে একটা ‘মুক্তিযুদ্ধ’ হিসেবে দেখানো সামান্য কাজ ছিল না

স্বাধীনতার পর ‘বাকশাল’ গঠন করে তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়িয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশকে আত্মনির্ভরশীল করা। বাঙালী জাতিকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বৈরী পরিবেশের মধ্যে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার জন্য ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে তাঁর সামনে আর বিকল্প কি ছিল? অথচ সেটিকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।



শেখ মুজিবের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল অত্যধিক বিশ্বাসপ্রবণতায় ভুল মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখা। সেটাই তাঁর জন্য কাল হয়েছে। এজন্য তাঁকে মূল্য দিতে হয়েছে নিজের প্রাণ দিয়ে। বাংলাদেশের মানুষের সেই মনের জোর, রাজনীতির জোর, সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার মানসিকতা কিন্তু মুজিবের ঐতিহ্য থেকেই স্ফুরিত হয়েছে। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা সেই ঐতিহ্যের ওপর ভর করেই দেশকে সাফল্যের মুখ দেখাচ্ছেন। সামাজিক উন্নয়ন আর রাজনৈতিক স্থিতিতে দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন উন্নয়নশীল দেশে। এ তো বঙ্গবন্ধুরই উত্তরাধিকার। ‘গরিব দুঃখী মানুষের মুক্তি’ নিয়ে তাঁর দুর্ভাবনার ফসল।

আসলে উত্তরাধিকার অলক্ষ্য, অবয়বহীন। আপাত-ব্যর্থতা, সাময়িক পরাজয়, এমনকি নৈরাজ্য আর বিনাশের মধ্যেও তা লুকিয়ে বসে থাকে, অপেক্ষা করতে থাকে, সুযোগ পেলেই ছড়িয়ে পড়ে। শেখ মুজিবের শতবর্ষ এই কথাটাই আবার নতুনভাবে স্মরণ করে দিয়ে গেছে। (১৭.০৩.২০২১)



লেখক : সাংবাদিক





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে


এই মুহুর্তের শীর্ষ খবর



তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ