Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Sunday 8th September 2024
আন্তর্জাতিক
রাখাইনে আরকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 27-Jun-2024

রাখাইনে আরকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলছে তুমুল লড়াই



সাননিউজবিডি ডটকম ডেস্ক:॥আন্তর্জাতিক॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মংডুতে গত কয়েকদিন ধরে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রেুাহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য চলমান যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। বেড়েছে বিমানের হামলাও। এতে সেখানে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসেছে। ফলে সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার বেলা পর্যন্ত রাখাইনের মংডুতে তুমুল সংঘর্ষে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তজুড়ে কেঁপে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার (মংডুতে) রোহিঙ্গারা টিকতে না পেরে প্রাণে বাঁচতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আবার অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্ত-নাফনদে বিজিবি-কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

রাখাইন ও সীমান্তের স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি দেশটির সশস্ত্র বিদ্রেুাহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনের মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নিতে সামরিক বাহিনীর ওপর তুমুল হামলা চালিয়ে শক্ত অবস্থা নেয়। দেশটির সামরিক বাহিনীও শহরটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরাকান আর্মিকে আকাশপথসহ ত্রিমুখী হামলা চালায়। দুই পক্ষ মংডু শহরটি নিয়ন্ত্রণে নিতে তুমুল চলমান যুদ্ধে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এই গৃহযুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের সুদাপাড়া, হাদিবিল, নুরুল্লা পাড়া, হাইর পাড়া, মুন্নী পাড়া, সাইরা পাড়া, ফাতনজা, ফেরানপ্রু, সিকদার পাড়া, হাঁড়ি পাড়া, হেতিল্লা পাড়ার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে। এদের মধ্য অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা জড়ো হয়ে রয়েছে। ফলে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে টেকনাফে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যদের অনুপ্রবেশের ঘটনাও বৃদ্ধি পেতে পারে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, রাখাইনে দুই পক্ষের যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আটকা পড়েছে। এদিকে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে সম্প্রতি রয়টার্সের খবরে উল্লেখ করে। এছাড়া বুধবার ভোরে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি দল অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে সীমান্তরক্ষীরা তাদের প্রতিহত করেছে বলে জানা যায়।

অনুপ্রবেশের বিষয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (৮-এপিবিএন) অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ আমির জাফর বলেন, বিগত কয়েক মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের ফলে সাধারণ রোহিঙ্গারা যারা সেখানে অবস্থান করছিল তাঁরা সেখানে টিকতে না পেরে বিভিন্ন দিকে ছুটছে। তারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাও করছে।

সীমান্তে বিজিবি-কোস্ট গার্ড কাজ করছে উল্লেখ করে অধিনায়ক জাফর বলেন, আমাদের বাহিনীর তৎপরতার কারণে তাঁরা (রোহিঙ্গারা) সেভাবে প্রবেশ করতে পারছে না। তবে আমাদের পরিষ্কার বার্তা হচ্ছে, নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হবে না। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে নাফনদীর ওপারে মংডু শহরের কয়েকটি এলাকার আশেপাশে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে রয়েছে বলে জান যায়। তারা সীমান্তপাড়ি দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন সীমান্তের লোকজন।

মিয়ানমারের ওপার থেকে আসা বিকট বিস্ফোরণের শব্দের কারণে এপারের সীমান্তের মানুষ ভয়ের মধ্য আছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের ওপার থেকে বিকট বিস্ফোরণে শব্দ অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে নাফনদ অতিক্রম করে মিয়ানমারের লোকজনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড বাহিনী।

সীমান্তের লোকজন জানান, মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাং এর পূর্বে নাফ নদের ওপারে মংডু শহরের অবস্থান। মংডু শহরের নাফ নদ দিয়ে প্রবেশপথ খায়েনখালী খালটি। ওই খালের মোহনায় রোহিঙ্গাদের জড়ো হতে দেখা গেছে। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচন্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীরা বিদ্রেুাহী আরাকান আর্মির দখলে থাকা এলাকা চৌকি উদ্ধারের জন্য এমন গোলাগুলি করছে বলে সীমান্ত এলাকার লোকজন মনে করছেন।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমারে এখনও সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। এর মধ্য রাখাইনের বুথেডংয়ে আড়াই লাখ, মংডুতে তিন লাখ এবং বাকিরা আকিয়াবসহ অন্য টাউনে রয়েছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে, সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গা নাগরিকের বসবাস। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশের টেকনাফে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সীমান্তে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলেও শুনেছি উল্লেখ করে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরীপাড়ার নবী হোসেন বলেন, রাতভর ওপারের গোলার বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কেটেছে। বুধবার সকালে থেমে থেমে গোলার চলছে ওপারে। ফলে বিজিবি আজকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিঘাটে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ রেখেছে। তাছাড়া সেখানে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলেও শুনেছি।

টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা মোঃ ইসলাম বলেন, রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারেনি। অনেকে ঘরের বাইরে রাত কাটিয়েছে। একটু পর পরই বিকট গুলির শব্দে সীমান্ত কেঁপে ওঠে। কাল রাতের মতো এমন গুলির শব্দ আগে কখনো শুনিনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।

ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যে কোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।



আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মূলত যুদ্ধের নামে রাখাইনে যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রেুাহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্য নাটক চলছে। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করবো, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে সেফজোন গড়ে তুলে তাদের সেখানে বসবাসের উপযোগী করা হোক।

বিজিবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৩ হাজার ৩৫৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের মিয়ানমারে (স্বদেশে) ফেরত পাঠায় বিজিবি। তাদের মধ্যে ৮৪৮ জন নারী, ৭৪৯ শিশু ও ১৭৫৭ জন পুরুষ। আর তিন রোহিঙ্গাকে থানায় দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সীমান্ত অনুপ্রবেশ ঠেকানার পাশাপাশি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের গোলার বিকট শব্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে সীমান্তের মানুষ যাতে ভয়ের মধ্যে না থাকে সেজন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে সীমান্তে আমাদের বিজিবি-কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে





তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ