Logo
TV
ব্রেকিং নিউজঃ
Friday 18th October 2024
গল্প
কবিতার মায়াবী আলোয় শহীদ দুই তরুণ
 SUNNEWSBD.COM
 Publish: 16-Dec-2019

কবিতার মায়াবী আলোয় শহীদ দুই তরুণ

শামসুর রাহমান

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯,

শশাংক পাল বেঁচে নেই জানি। তিনি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল তাঁর। এই তেজি তরুণ নিজে গল্প, কবিতা লিখতেন এবং মাঝেমধ্যে প্রকাশ করতেন লিটল ম্যাগাজিন। তাঁকে দেখলেই বোঝা যেত, অভাবের সংসারে টিকে আছেন কোনোমতে। দারুণ শীতেও পাতলা পাঞ্জাবি পরে থাকতেন—কোনো শৌখিন হিপ্পিয়ানার বশে নয়—শীতবস্ত্র জোটানো সম্ভব ছিল না বলেই। অথচ তাঁর মাথা ছিল সব সময় উঁচু—কোনো দিন দারিদ্র্যের কথা বলেননি মুখ ফুটে। কোনো নালিশ করতে শেখেননি যেন। এত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও যে কী করে শ্রাবস্তীর মতো পত্রিকা প্রকাশ করে ফেলতেন, তা ভেবে অবাক হয়ে যেতাম, লেখা আদায় করার ব্যাপারে তাঁর জুড়ি আজও আমি পাইনি। আমার মতো আলস্যপরায়ণ লোকের কাছ থেকেও তিনি একাধিকবার লেখা নিয়ে গিয়েছিলেন।

বস্তুত, একজন পরিশ্রমী নিষ্ঠাবান সম্পাদক হিসেবে তিনি তাঁর পরিচয়কে উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন অল্প সময়ের মধ্যে। বিশিষ্ট লেখক আবদুল মান্নান সৈয়দ শশাংক পালের সম্পাদক-সত্তার রেখচিত্র এঁকেছেন এভাবে: ‘সম্পাদক হিসেবে তাঁর কৃতির বিচার করবেন সাময়িকপত্রের ইতিহাস-রচকেরাই। আমি শুধু নির্দিষ্ট করে বলতে পারি যে সম্পাদক হিসেবে তিনি ছিলেন যোগ্য: লেখকদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক, সাহিত্যবোধ, সাহিত্যরুচি, শ্রমিকতা—এ সবই যথাযথ অধিগত ছিল তাঁর। আমাদের এই দেশে, যেখানে সম্পাদনা মানে জুতা সেলাই থেকে সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সেখানে সবগুলি নির্বাহ করবার ক্ষমতা তাঁর ছিল।’ শশাংক পালের সঙ্গে আর কোনো দিন দেখা হবে না, কখনো তিনি আর আন্তরিক সুরে বলবেন না, ‘উল্কার জন্যে একটা লেখা দিতে হবে, লেখা না নিয়ে যাব না কিন্তু’—এ কথা ভাবতেই কেমন খারাপ লাগে।

এবং খারাপ লাগে আবুল কাসেমের কথা ভেবে। জানি না, এই তরুণ কবি বেঁচে আছেন কি না। শুনেছি পঁচিশে মার্চের সেই ভয়ংকর রাতে তিনি নাকি জগন্নাথ হলে ছিলেন। তারপর থেকে কেউ আর তাঁকে ঢাকায় দেখেনি। ছোটখাটো মানুষ, কথা বলতেন কম, জিবে কিছুটা জড়তা ছিল হয়তো। নর্থব্রুক পাঠাগারে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সেখানে একটি সাহিত্যসভায় প্রথম তাঁর কবিতা শুনি। সসংকোচ আবৃত্তি, কবিতাটিও মামুলি। কিন্তু কিছুকাল পরে তাঁর লেখায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এল। লক্ষ করলাম, তাঁর কোনো কোনো রচনায় রীতিমতো কবিতার স্বাদ পাওয়া গেল। মাঝেমধ্যে তাঁর সম্পর্কে নানা উড়োখবর কানে আসত। আবুল কাসেম নাকি শেষ পর্যন্ত জুয়ায় মজে ছিলেন। তাঁর নিজের জীবনে তিনি যত অন্ধকারই মাখুন না কেন, তাঁর হৃদয়ে জ্বলে উঠেছিল এক পবিত্র অগ্নিশিখা, কবিতার মায়াবী আলো। জানি না, আবুল কাসেম জীবিত না মৃত।

৩ অক্টোবর, ১৯৭২





সাননিউজবিডি ডটকম




এখানে আরও খবর রয়েছে


এই মুহুর্তের শীর্ষ খবর



তারিখ অনুযায়ী খবর দেখুনঃ